ফিরবে খোকা এই একুশে

ফিরবে খোকা এই একুশে

-কাজল দাস 

 

আরও একদিন, আরও একদিন, এভাবেই প্রতিদিন
স্মৃতির উঠোন পেরিয়ে দু’চোখ জেগে আছে সারাদিন
কুমড়ো ফুলের দিন ফুরালো, নবান্নও চলে যায়,
ফিরবি কবে খোকা আমার, আয়রে ফিরে আয়।

সেই যে গেলি কিসের খোঁজে,আর তো দেখা নেই
কোথায় খোকা কি যে করিস বলিস না কাউকেই
তোকে খূঁজি পথে পথে,- বন্ধু স্বজন সবার কাছে
সবাই বলে আসবে ফিরে,ওর ঠিকানা চুরি গেছে

মায়ের ভাষার মান রাখতে করছে লড়াই পথে পথে,
কথার ঝুড়ি আনবে খোকা, বাংলা মায়ের আঁচল হতে।
সেদিন দেখ’ ঘুচবে আঁধার উঠবে হৃদয় আলোয় ভরে-
যে কথা’টা হয়নি বলা, বলবে সবাই উজাড় করে।

তিলের নাড়ু,খৈ-এর মোয়া থাকলো পড়ে ঘরের কোণে
ঐ বুঝি গো আসলো খোকা,দাঁড়িয়ে আছে ঐ উঠোনে
ঝাপসা চোখে পাইনা ঠাওর- খোকা এলি আমার দ্বারে?
খোকা তো নেই, একলা আমি হাতরে মরি এই আঁধারে।

দিন চলে যায় মাস- বছর,খোকার কোনো খবর পেলে?
সবার মুখেই কুলুপ আঁটা, হেঁয়ালি শুধুই কথার ছলে।
এ কেমন বিচার খোকারে তোর,কেউ কি এমন করতে পারে?
মায়ের ভাষা বাঁচাবি বলে, মা-কেই তুই রাখলি দূরে।

এখন আমার ভাত জোটে না,ফ‍্যান চেয়ে খাই পরের কাছে
এক কাপড়ে গোসল করি, ছেঁড়া চাদরে শরম বাঁচে।
আয়রে ফিরে সোনা আমার বুকের মাঝে আয় ফিরে আয়,
মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প শোনার দিন চলে যায়।

রাত ভেসে যায় চোখের জলে আগলে দুয়ার অপেক্ষাতে,
ঘুমমোছা চোখ আটকে থাকে দেয়ালে তোর ছবিটাতে।
চাইনা আমি কথার ঝুড়ি, চাই যে শুধুই দেখতে তোকে,
মরার আগে এবার খোকা রাখবো মাথা তোর ঐ বুকে।

হঠাৎ সেদিন খবর এলো- ঐ সুদূরে গাছের তলায়
মায়ের খোকা ঘুমিয়ে আছে, মাটির নিচে শেষ ঠিকানায়।
ঘুমিয়ে আছে, কি ভাষা তার কি কথা তার থাকল বাকি,
মা শোনেনি দেশ শোনেনি শুনেছে শুধুই বনের পাখি!

ছেলের বুকে মাথা রেখে মা-ও চলে যায় ঘুমের দেশে
ফিরবে না আর মায়ের খোকা,বসবে না আর মায়ের পাশে
সব কোলাহল শান্ত হলো, শিশুর কন্ঠে ভেসে এলো
সদ‍্যজাত অস্ফুট সুর- শুনে সবার প্রাণ জুড়োলো।

স্বরে অ স্বরে আ, অ- এ অজগর আসছে তেরে,
খোকা বুঝি ঐ ঘরে ফেরে, খোকা বুঝি ঐ উঠোনে ফেরে।
আ- এ আমটি খাব পেড়ে, আসবে সুদিন ধানের শিষে,
আমার খোকাও আসবে জানি রক্ত মুছে এই একুশে।

 

Loading

Leave A Comment